অনুষ্ঠান স্থল কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরির শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন। নিয়মিত পাবলিক লাইব্রেরিতে যাওয়া হয়। কিন্তু আজ যে ঢোকাই যাচ্ছেনা! সমস্ত চত্বরে গাড়ি ভর্তি। এমনকি গাড়ির পার্কিং গেটের বাহিরে রাস্তায় বেশ খনিকটা। গনমাধ্যম, গুরুত্বপূর্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্টজন, বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের ভীড়। ভাবছিলাম গুরুত্বপূর্ন রাস্ট্রীয় কোন বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠান। একটু সামনে গিয়ে বুঝলাম আসল ঘটনা। আমি যে আয়োজনে এসেছি সেটিকে ঘিরেই এতকিছু। একটু ভিতরে বড় করে ফ্রেমে একজনের পোর্টরেইট এবং তাতে লেখা আছে “নীল ছোয়া কিংবদন্তি সৈয়দ হাসান ইমাম”। হাঁ, তিনি বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির জগতে এক অনন্য কিংবদন্তী ।
আমার নামের সাথে একটু মিল। কাজের দিক থেকে আমি তার ধারে কাছেও যেতে পারব না। তবে তাকে জানার আগ্রহটা একটু বেশিই ছিল। সঙ্গীতা দি দুইদিন আগেই বলে রেখেছিল “অবশ্যই আসবি কিন্তু”। উদীচীতে কাজ করার সুবাধে তার সম্পর্কে অল্পবিস্তর জানতে পারি। তাছাড়া ছোট বেলা থেকেই তাকে নাটক, চলচ্চিত্রে সবাই দেখেছি।
মিলনায়তনের ভিতরে ঢুকে যা দেখলাম তা আমার জন্য অনেক স্বরনীয় হয়ে থাকবে। বর্তমান সময়ের চারজন গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রী, জাতীয় অধ্যাপক, সাংবাদিক, শিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক। এক মঞ্চে এত বিশেষ্টজন ও প্রিয় ব্যক্তিদের একসাথে কখনও দেখিছি বলে মনে হয়না। ৫০০ আসনের সবগুলো পূর্ন এবং আশপাশে দাড়িয়ে বসে আরো প্রায় ১০০ জন। ততক্ষনে অনুষ্টান শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম-এর ৮০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন পর্ষদের সদস্য সচিব ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। দুই শতাধিক বিশিষ্ট নাগরিকের সমন্বয়ে গঠিত ‘শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম-এর ৮০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন পর্ষদ’ অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। এই উদযাপন পর্ষদের আহবায়ক শ্রদ্ধেয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি কামাল লোহানী এবং সদস্য সচিব হলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
তাঁকে উদ্দেশ্য করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক রচিত মানপত্র পাঠ করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। এরপর শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম-এর ৮০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন পর্ষদ-এর আহবায়ক শ্রদ্ধেয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন পর্ব শুরু হয়। শুভচ্ছো জানাতে এসছেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শিক্ষাবিদ ড. আব্দুল মান্নান চৌধুরী এবং সৈয়দ হাসান ইমামের সহধর্মিনী ও বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান। এছাড়াও, অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা স্মারক পাঠানো হয়। শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন শতাধিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সংগঠন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবেদ খান।
শুভেচ্ছা জ্ঞাপন শেষে সৈয়দ হাসান ইমামের ওপর রচিত ‘নীল ছোঁয়া কিংবদন্তী’ শিরোনামে একটি সম্মাননা গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। উক্ত গ্রন্থে তাঁর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ব্যক্তিগণ। এখানেই শেষ নয়। এই বরেণ্য শিল্পীর জীবন ও কর্মের নানান দিক নিয়ে প্রদর্শিত হয় একটি তথ্যচিত্র। এটি পরিচালনা করেছেন সৈয়দ হাসান ইমাম-এর কন্যা ও বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম। অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সালমা আকবর, ফকির আলমগীর ও মামুন জাহিদ খান। ছিল সম্মেলক সঙ্গীত। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আশরাফুল আলম, ডালিয়া আহমেদ ও মহিদুল ইসলাম।
সৈয়দ হাসান ইমাম বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতির জগতে এক অনন্য কিংবদন্তী। চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা হিসেবে তিনি আমাদের সকলের মনে এক স্থায়ী শ্রদ্ধার আসনে আসীন। মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময় থেকেই সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে তিনি পুরোধা ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নানাভাবে কাজ করেছেন স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ পাঠ করতেন সালেহ আহাম্মেদ নামে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনে তিনি পালন করেছেন মুখ্য ভূমিকা। বাংলাদেশের সকল প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সৈয়দ হাসান ইমাম এক অনমনীয়, সাহসী যোদ্ধার নাম।