শিক্ষা পন্য নয় অধিকার, শিক্ষার বানিজ্যিকিকরণ-এ বিশ্বব্যাংকের ২০ বছরের কৈাশলপত্র বাতিল করা, ভর্তি ফি ও বেতন কমানো, পরিবহন ও ক্যান্টিন সুবিধা বৃদ্ধিসহ নানান বিষয় নিয়ে গত ৮বছর যাবৎ ক্যাম্পাস জীবনে অনেক অন্দোলন করতে দেখেছি ও অংশনিয়েছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনগুলো এ ধরনের আন্দোলনের উদ্যোক্তা ও পথপ্রদর্শক। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এধরনের কোন আন্দোলন হয়না।
কারন একটাই। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন, উদীচী, ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন মত সংগঠনগুলো অনুপস্থিত। কতৃপক্ষ ও শিক্ষার্থীরা সংগঠন চর্চায় আগ্রহ প্রকাশ করেনা। কারন সেখানে শিক্ষর্থীরা যায় শুধু টাকার বিনিময়ে দ্রুততম সময়ে নিজেকে প্রডাক্ট হিসেবে প্রমান করার সনদ পেতে আর শিক্ষকরা যায় টাকার জন্য। অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা যায় টাকা দিতে আর শিক্ষকরা টাকা নিতে। সুতরাং এ দুই ছাড়া অন্যকোন জাতীয় গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে তাদের আগ্রহ নেই।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি’র উপর ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন চলছে। তাদের ভ্যাট প্রত্যাহারের আন্দোলনের সাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় একাত্ব হয়নি, তাই তারা খুব্ধ হয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ সাইটে ৫২, ৭১ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা নিয়ে তারা বড় বড় উক্তি করেছেন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা হয়ত জানেইনা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার বানিজ্যিকিকরণ নিয়ে প্রতিনিয়ত এধরনের আন্দোলন হয়ে আসছে। এ আন্দোলন চলমান প্রক্রিয়া। তারাতো কখনো গুরুত্ব দেয়নি বা একত্ব হয়নি। আজ শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে বৈষম্যের জন্য কোন একটি পাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদেরকে কর্মসূচী দিতে দেখিনি।
যদিও ইতোমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একাধিক সংগঠন ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন ও আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন। অনেক সংগঠন তাদের দাবির সাথে একমত হয়ে কর্মসূচী দিয়েছেন। তারাপরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হ্যাক করার মধ্যদিয়ে কি বুঝাতে চেয়েছেন?
তবে দুঃখজনক এইযে, দেশের সবচেয়ে বড় ও ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটের নিরাপত্ত কেন এত দুর্বল থাকলে। সবচেয়ে মেধাবীদের দারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত নিরাপত্ত কেন এতদুর্বল?
আমাদের মাথাপিছু ঋণ ৩২ ডলার(প্রায় ২৪০০টাকা)। নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ হলেও নূন্যতম বেতন নতুন পে স্কেল অনুযায়ী মাত্র প্রায় ৮হাজার টাকা। কিন্তু লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা দেশের ৮৭টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে অনেক মোটা অংকের কাটা দিয়ে। কখনোতো তাদের শিক্ষার অধিকার নিয়ে বা কম খরচে শিক্ষার সুযোগ তৈরী নিয়ে কোন আন্দোলন করতে দেখিনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী যে শিক্ষার বানিজ্যিকরনের ফাঁদে পড়েছে তা তারা উপলব্ধিই করতে পারেনা। এতবেশি অর্থদিয়ে পড়তে হয় অথচ তারা কখানো শিক্ষাখাতে অর্থবরাদ্দ বাড়ানো কথা বলেনা। বরাদ্দ বাড়িয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে যুগোপোযোগী করলে অন্তত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে অনেক ভালো মানের শিক্ষা পাওয়া যাবে। আমার মতে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ(অল্প সংখ্যাক ব্যতিত) প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে খারাপ। সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে আমরা দেখেছি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নিতী, শিক্ষার নিম্নমানসহ অবকাঠামোগত বিভিন্ন সমস্যা ।
একটি দেশের শিক্ষার বাজেটে যে বরাদ্দ থাকা দরকার আমাদের বরাদ্দ তার অর্থেক। সেখানে সরকার শিক্ষারজন্য বরাদ্দ না বাড়িয়ে বরং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপর ভ্যাট আরোপ করেছ। দুঃখজনক।
প্রাইভেট কিংবা পাবলিক নয়, শিক্ষার জন্য আন্দলন।