২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চাকুরির দুই বছর পূর্ন হলো। কর্মব্যস্ত চাকুরি জীবনে দেখতে দেখতে দুটি বছর কেটে গেলো। প্রিয়জনেরা বলে, উপযুক্ত একটি কর্মক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। আমিও তাই মনে করি। সুন্দর সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমি মনেকরি। প্রতিষ্ঠানটি ‘শিল্পসংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। জেলা থেকে উপজেলায় বিস্তৃত কর্মপরিসরের শিল্প সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে। এরকম একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পেরে গর্বিত।
দুইবছর একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পর নিজেকে মূল্যায়নের সময় এসেছে। ইংরেজিতে বলে সেলফ এ্যাসেসমেন্ট। নিজের কাজের মান প্রাতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে কি যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছি? এই অল্পসময়ে বিশেষ কোন সাফলতা বা অর্জন আছে কি? কর্মক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারছি কি না? নিজের পেশা ও নেশার মধ্যে সামঞ্চস্বতা বজায় রাখতে পারছি কি? প্রতিষ্ঠানের সহকর্মীদের সাথে কি যথাযথভাবে মানিয়ে নিতে পারছি?-এরকম অনেক প্রশ্নজাগে মনে। নিজেই নিজের কাজের মূল্যায়ন করা সম্ভব কিনা জানিনা। তবে কিছুটা চেষ্টা করছি সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করার এবং সেই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। ভালোভাবে কাজ করলে অন্যদের কাছে নিশ্চই মূল্যায়ন পাওয়া যাবে।
দেশ-বিদেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করা এবং বিশ^মানের বিভিন্ন পরিবেশনা উপভোগ করার সুযোগ এখানে আছে। প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বিশে^ বাংলাদেশকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখছে। শিল্পের সকল মাধ্যমের রস আস্বাদনের সুযোগ এখানে আছে। সুতরাং এরচেয়ে উপভোগ্য কর্মস্থল দ্বিতীয়টি আর পাওয়া যাবে না।
সরকারী প্রতিষ্ঠানে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা যেমন আছে তেমন আমলাতান্ত্রিক সরলতাও আছে। প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্ব অনুযায়ী কাজ করে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে থাকে। সৌভাগ্যের বিষয় এই যে, সহকর্মীরা অনেক আন্তরিক ও বন্ধুত্বপূর্ন। দুইবছরে যা কিছু সফলতা তার জন্য কৃতজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালকসহ সকল সহকর্মদের প্রতি। সবার সহযোগীতায় অনেক কঠিন কাজও সহজ মনে হয়।
প্রতিমূহুর্তে পড়াশোনার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন, প্রবিধান এবং সরকারের বিভিন্ন বিধিবিধান ও সুযোগ সুবিধা জানতে হচ্ছে। যত জানছি ততই নির্দিষ্ট গ-ির মধ্যে আটকে যাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে। ব্যবসায়ীর মধ্যে চাকুরিজীবির পার্থক্য এখানেই। ব্যবসায়িরা আইন বা বিধিবিধান দ্বারা সীমাবদ্ধ থাকন না অথচ তারা অনেক বেশি সুশৃঙ্খন, কর্মঠ ও নিয়মানুবরতী হয়ে থাকেন। চাকুরীজিবীদের মধ্যে অনেক বেশি বিধিবিধান দারা শৃঙ্খলা আনতে হয়। তবে সরকারী অফিস এখন আর আগের মতো এতটা পিছিয়ে নেই। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ নীতি গ্রহণের কারনে সরকারী অফিসগুলোতে অনেক বেশি আধুনিক ও অটোমেশন হচ্ছে। আধুনিক অফিস ব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে কর্মজীবনের শুরু করতে পারাটা সৌভাগ্যের। বাৎসরিক কর্মসম্পাদন চুক্তি, উদ্ভাবনী কার্যক্রম, জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল, ডিজিটাল সেবা, সিটিজেন চার্টার ও এসডিজিসহ সরকারের বিভিন্ন নির্দেশনার প্রেক্ষিতে সরকারী অফিস নতুন রূপে সেজেছে। যার সুফল পাচ্ছে সর্বস্তরের নাগরিক।
হঠাৎ একমাসে দেখি বেতন কিছুটা কম পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে দেখলাম প্রফিডেন্ট ফান্ড বেতনের কিছু অংশ জমা রাখার সরকারী নিয়ম অনুযায়ী তা কেটে রাখা শুরু হয়েছে। অর্থাৎ চাকুরী আরেকটু পরিপক্ক হলো। পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদনের নতুন অভিজ্ঞতা পেলাম। চার বছর আগে পাসপোর্ট করার সময় প্রথম পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে হয়েছে। আয়করের মতো বিষয়গুলো ভালোভাবে জানতে হচ্ছে। এবারে সরকারী প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনের অভিজ্ঞতা হলো। সবকিছু ঠিক ঠাক হওয়ার পর স্থায়ীকরণ। দুই বছর পূর্তির ঠিক আগে আগেই স্থায়ীকরণের প্রক্রিয়া শেষ হলো।
প্রথম একটা বছর সবকিছুর সাথে পরিচিত হতে এবং কাজের পদ্ধতি বুঝতে সময় চলে যায়। দ্বিতীয় বছরে আস্তে আস্তে কাজের সাথে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা। সততা নিষ্ঠা আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে বলে বিশ^াস করি। সততা ও বিশ^স্ততার পরিচয় দেওয়ার অনেক সুযোগ সরকারী প্রতিষ্ঠানে আছে। জনগনের সেবক হিসেবে সংস্কৃতির সেবা করার চেষ্টা করছি মাত্র। পরিশ্রম কখনো বৃধা যায়না। সামনের দিনগুলোতে সঠিক ও সফলভাবে কাজ করে যাওয়ার প্রত্যাশা করছি।