শিক্ষার বানিজ্যিকিকরণ এর সাথে সাথে যে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন আয়োজনও বানিজ্যিক হয়েগেছে তা আজকেই উপলব্ধি করলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন রাজনৈতিক নেতার ছাবি সম্বলিত ব্যানার। ব্যানারের নিচে আংশিক ঢাকা পড়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ও অনুষ্ঠানের ব্যনার।
উপাচার্য ভবনের দুই পিলারে বড় দুটি জুসের বতল সম্বলিত লম্বা ব্যনার। নতুন ভবনেও একই অবস্থা। সমস্ত ক্যাম্পাসে আলোক সজ্জা করা হয়েছে। খুবই ভালো ও সুন্দর দেখাবে কিন্তু দু:খজনক ব্যপার হচ্ছে বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও দাপ্তরিক কাজ শেষ হয় এবং গড়িও ছেড়ে দেয় তাই রাতে আলোক সজ্জা উপভোগ করার সৌভাগ্য শিক্ষার্থীদের নেই।
বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা না ঘটলে এটাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাওয়া আমার শেষ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। ২০০৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরিক্ষায় পাশের পর বিশ্বিবিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনের শুরু। অনেক দেরিতে হলেও আর এক বছরের মধ্যেই শেষ হবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী।
২০ অক্টোবর ২০১৩। আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। তিন দিনব্যাপি উৎযাপন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করা হল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সংগঠনগুলো সবাইকে থাকতে হবে। তাই সকালে উঠেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাই।
সবাইমিলে অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছিলাম তখন হঠাৎ মনেহল এটাতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার শেষ অনুষ্ঠান। খুব ভালো একটা অনুষ্ঠান হবে ভেবেছিলাম। আশাকরেছিলাম সাংস্কৃতিমনা নতুন উপাচার্জের অধীনে তিনদিন ব্যাপি আয়োজিত অনুষ্ঠানটি নিশ্চই স্বরণীয় হয়ে থাকবে।
শিক্ষার্থীরা সংগঠন চর্চা করে নিজের সময়, শ্রম, মেধা ও অর্থদিয়ে । বছরে একটি আয়োজনের মধ্যদিয়ে তারা তাদের প্রতিভা তুলে ধরতে চায়। কিন্ত শিক্ষকদের মানসিকতার জন্য তাও সম্ভব হয়ে ওঠেনা।
অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও মহড়ায় যখন ব্যাস্ত হঠাৎ শুনলাম শিক্ষার্থীদের পরিবেশনা বাদ দেওয়া হয়েছে। কারন হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বললেন “রাজধানীতে সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ তাই অনুষ্ঠান ৬টার আগেই শেষ করতে হবে।” বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, বড় বড় শিল্পিরা আসবে, ব্যান্ড সংগীত হবে তাই তোমাদের পরিবেশনা বাদ দিয়ে তদেরটাকে গুরত্ব দিতে হবে।
আলোচনা ও বক্তব্য পর্বে বড় একটি সময় বরাদ্দ হয়েতে যেখানে বক্তারা তাদের চেহারা দেখাবেন, নিজেদের ও কতৃপক্ষের গুনগান করবেন ও খানিকটা তোষামুদিও করবেন। যা শিক্ষার্থীদের কোন কাজে আসবেনা।
এতো গেল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের কথা একদিনের জন্য অনলাইন পত্রিকায় ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে অথচ সংগঠনগুলোকে পরিবেশনার প্রস্তুতির জন্য কোন বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। সাভাবিক ভাবেই প্রশ্নজাগে
- শিক্ষার্থীদেরকে সাজসজ্জার জন্য দায়িত্ব দিলে কি কম খরচে আরো ভালো এবং সৃজনশীল আয়োজন হতনা?
- বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সাস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনার চেয়েকি বাইরের নামিদামি শিল্পিকে প্রধান্য দেওয়া উচিত?
- বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থদিয়ে কি বছরে একটা বড় অনুষ্ঠান আকারে করা উচিত নয়?
- তাহলে কি বিশ্ববিদ্যালয় শুধুই পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনের জন্য?
হা যুক্তি আছে অনেক। বলা সহজ করা কঠিন। শিক্ষার্থীরাতো টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে নিবে। কাজ ঠিকমত করবেনা বরং নিজেদের মধ্যে মারামারি করবে। সুতরাং টাকা বেশি খরচ হলেও অনুষ্ঠান মানসম্মত না হলেও তাই করা হবে। যদিও শিক্ষকদের মতে ভাড়াকরা বড় বড় শিল্পীদের আনলে ও সন্ধা ৬টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করলেই মানসম্মত হবে।
শিক্ষকদের কথা যৌক্তিক কিন্তু শিক্ষার্থীদের সৎচরিত্রবান করাই শিক্ষকের কাজ। সুতরাং শিক্ষার্থীর কাছে টাকা অথবা দায়িত্ব দিতে যদি চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তাহলে তার ব্যর্থতার দায়িত্ব শিক্ষককেই নিতে হবে। একজন শিক্ষক যখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটা অংকের টাকায় ক্লাস নেওয়ার লোভ সামলাতে পারেননা তখন শিক্ষার্থীর এরকম অবস্থা হতেই পারে। শুধু তাই নয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পদোন্নতি ও রাজনীতি নিয়ে ব্যাস্ত থাকে শিক্ষকরা। আমরা তাহলে শিখব কার কাছ থেকে।
এখনো মনেপড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কথা। গত ৮ বছারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ওটাই সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সংগঠন, শিল্পী সবার অংশগ্রহনে দিনব্যপি সুন্দর ও সফল একটি আয়োজন ছিল। প্রতিটি পরিবেশনা ছিলো অসাধারন সুন্দর ও মানসম্মত।
এই পরিবেশনাগুলোর উপর নির্ভর করে পরবর্তিতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে তরুন শিক্ষার্থীদের অগ্রহ ও অংশগ্রহন। আর ভালো মানুষ গড়তে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। যে সব শিক্ষক ছাত্র জীবনে সংগঠন চর্চা করেছেন তারা বিষয়টি বুঝতে পারলেও তারা সংখ্যায় খুব কম। বেশির ভাগ সময় বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত শিক্ষকদের মতামতের গুরুত্ব দেওয়া হয়না। এছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন শিক্ষকের ক্ষমতা ধরে রাখার যে প্রবনাতা ও ক্ষমতার অহংকার তা শিক্ষার্থীদের করে অবহেলিত। বিভিন্ন সময় শিক্ষর্থীরা ভালো পরামর্শ দিলেও তা গ্রহন করেন না।
কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের আচরন ও কর্মকান্ডে শিক্ষকরা কষ্ট পেয়ে থাকেন। কিন্তু তাই বলেতো সকল শিক্ষার্থীকে এক ভাবে দেখলে চলবেনা। আর সবাই সবসময় একরকম থাকেওনা। একসময় যে শিক্ষার্থী তার শিক্ষাককে কষ্ট দিয়েছে আজ হয়ত সে বিপরীত আচরনও করতে পারে।
এতকিছুর পরেও শিক্ষকদেরকে ধন্যবাদ এতবড় আয়োজনের জন্য। বড় আয়োজনে ভুলত্রুটি থাকবে এটাই এখন আমাদের সান্তনা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য কামনা করি।