‘সৃজনশীল বাংলাদেশ’ শ্লোগনে শিল্পসংস্কৃতি ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবীক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমি, শিল্প সংস্কৃতির একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। সংস্কৃতির আলো ছড়িতে দিতে সারাদেশে জেলা উপজেলা পর্ায়ে বিস্তৃত এই প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারায় ছোটবেলা থেকে আমার সংগঠন চর্চা শতভাগ সার্থক হয়েছে বলে মনে করি। এজন্য দায়বদ্ধতাও অনেক বেশি। শিল্প সংস্কৃতির সাথে যুক্ত সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও শিল্পীদের সেবা করার একটি বড় সুযোগ তৈরী হয়েছে। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে নিরলস ও নিঃসার্থ পরিশ্রম করে যেতে হবে। একবছর চাকুরীজীবন শেষে এটিই আমার সবচেয়ে বড় মটিভেশন/ইন্সপিরেশন/উৎসাহ।
২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, হঠাৎ সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেল। নতুন কর্মস্থলে যোগদান এবং পূর্বের কর্মস্থত ত্যাগের একটি মিশ্র অনুভূতি। সর্বাদিক পঠিত বাংলা পত্রিকা দৈনিক প্রথম আলো পরিবারের দীর্ঘদিন গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের পর হঠাৎ করেই সরকারী চাকুরীতে যোগদান। ভালোই চলছিলো সবকিছু। সবকিছুর সাথে ভালোভাবে মানিয়ে নিয়ে ও দেশজুড়ে বিস্তৃত নেটওয়ার্কে কাজ করার অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিজেকে বিভিন্ন দিক থেকে সমৃদ্ধ করতে পেরেছি। এজন্য প্রথম আলো পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। প্রথম আলোতে অভিজ্ঞতার দিনলিপী নিয়ে বৃহৎ পরিসরে অন্য কোনদিন লিখতে বসব। আজকে শুধু শিল্পকলাতে যোগদানের পর থেকে একবছরে সরকারী চাকুরীর অভিজ্ঞতা ও নতুন কর্মস্থলে যোগদানের পর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, কাজের সুযোগ তৈরী করা, সবকিছুর সাথে মানিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন করনীয় নিয়ে কথা বলব।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে শিল্পী ও অফিসার মিলিয়ে বিভিন্ন পদে ৪৬ জনের নিয়োগ হলো। সংখ্যায় সবচেয়ে বেশি হলো শিল্পী। শিল্পীরা দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করেন এবং শিল্পীদের মন খুব উদার হয়। তাই তাদের সাথে যোগদান করতে পেরে আমি গর্বিত। প্রথমে প্রায় দুই মাসের প্রশিক্ষণে শিল্পকলা একাডেমির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সম্মক ধারণা হলো। তারপর থেকে শুরু হলো কর্মব্যস্থ চাকুরী জীবন। প্রথমেই কাজ করার সুযোগ হলো ‘সার্ক ঐতিহ্যবাহী নৃত্য ও কারুশিল্প প্রদর্শনী’। তারপর এক এক অরো অনেক বড় ও জাতীয় আয়োজন। এপ্রিলের ১ তারিখে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পাবার পর নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার পালা। সরকারী প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কাজের দায়বদ্ধতা নিয়ে কাজ করার নতুন অভিজ্ঞতা।
কর্মস্থলের পরিবেশ খুব গুরুত্বপূর্ন একটি বষিয়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সুবিশাল জায়গাজুড়ে একাধিক ভবন ও উন্মুক্ত প্রাঙ্গন নিয়ে গঠিত। এখানে সবসময় শিল্পের মানুষ ও শৈল্পিক মানুষের অবস্থান। প্রতিদিন ৭টায় একযোগে তিনটি মিলনায়তনের নাটক মঞ্চস্থ হয়। চলে চারুকলা প্রদর্শনী ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজন।
পৃথিবীর সবচেরে বড় ও সেরা প্রতিষ্ঠানেও কর্মীরা চাকুরী ছাড়ে এবং নতুন নিয়োগের ঘটনা ঘটে। অথ্যাৎ সকল প্রতিষ্টানেরই ভারো খারাপ দিক রয়েছে। একইভাবে সব প্রতিষ্ঠানেই যেমন ভালো কর্মী থাকে তেমন কিছু খারাপ কর্মীও থাকে। এসবকিছুর মধ্যেও কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক আচরণ, পরিশ্রম, মেধা, সততা ও নিষ্ঠা নিয়ে সবার মন জয় করা যায়।
আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। তাই প্রশ্ন আসতেই পারে, এটি আমার জন্য আশির্বাদ না অভিশাপ। আমি মনে করি কে কী বিষয়ে পড়াশোনা করল, এটির উপর ব্যর্থতা নির্ভর করে না। সফলতা ব্যর্থতা নির্ভর করে ব্যক্তির উপর। ব্যক্তির চিন্তা, চাহিদা ও মানুষিকতার উপরই সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকা সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষই কৃর্তিমান হতে পারেন না। আবার শরীরের কোন একটা অঙ্গ না থাকার পরও পৃথিবীতে তাঁর অবদান স্বাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।
যা হোক, নিজের কথায় ফিরে আসি। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও মানবিকের একটি ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করছি। এতে কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে দীর্ঘদিনের সংগঠন চর্চা আমাকে যে মানবিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিয়েছে। তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারলে, সকল বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে আমার বিশ্বাস ।
নতুন কর্মস্থলে চাকুরীর প্রথম একটি বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে, প্রতিষ্ঠানের আদর্শ উদ্দেশ্য, কাজের পরিধি এবং কর্মীদের সম্পর্কে ভালো ভাবে জানতে হবে। প্রথম প্রথম খুব সতর্কতার সাথে সবার নাম পরিচয় জানতে হবে। কারো সাথে যেন কোন রকম ভুল বোঝাবুঝি তৈরী না হয় সেদিকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। নিজের কাজকে আয়ত্ত্ব করার মনোভাব ও শেখার আগ্রহ থাকতে হবে। এসব বিষয়গুলো আয়ত্ব হলে আস্তে আস্তে কাজের গভীরে যেতে হবে এবং আগ্রহের বিষয় নিয়ে কাজ করার সুযোগ পেলে কখনোই একঘ্যায়ামী আসবে না। তবে সময়ের সাথে সাথে নিজেকে হালনাগাদ করতে হবে। প্রতিনিয়ত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। নতুন নতুন নীতি, পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার আগ্রহ থাকতে হবে। চাকুরী জীবনের প্রথম একটি বছর খবুই নগন্য সময় কিন্তু এই সময়টিতেই বঁকি জীবনের বীজ বুনতে হবে।
-হাসান মাহমুদ