২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার পদে যোগদান করেছি। আজকে ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১। কর্মব্যস্ততার মধ্যে দেখতে দেখেতে চার বছর কেটে গেল। এই পথচলায় পাশে থেকে সহযোগিতা করার জন্য সকল সহকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা। ভবিষ্যতে আরো বেশি উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দিতে সবাইকে পাশে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি এবং আশির্বাদ কামনা করছি।
একসাথে যোগদান করা ৪৫জন সহকর্মী মিলে প্রতিবছরই দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপন করার চেষ্টা করি। এবছরও ব্যতিক্রম হয়নি। সবাই মিলে ৪র্থ বছর পেরিয়ে ৫ম বর্ষে পদার্পণের উদযাপন করেছি। একসাথে একটি দিন কাটিয়েছি। সহকর্মীদের সাথে সারাদিন কাজ করা হয় কিন্তু সময় কাটানো হয় না। তাই সবার সাথে সময় কাটানোর জন্য দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষভাবে প্রস্তুতি নিয়ে দিনটি উদযাপন করা হয়।
দুই বছর আগে ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটে “বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে দুই বছর” শিরোনামে প্রকাশিত লোখার মধ্যে প্রথম দুই বছরের অভিজ্ঞতা, ভালোলাগা ও খারাপলাগা অনুভূতি বলেছি। তারই ধারাবাহিকতায় এই লেখাটি লিখলাম।
বিগত দুই বছরের মধ্যে দেড় বছরের বেশি সময় ছিলো মহামারী কভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের আগ্রাসন। বিশ্বে ভয়াবহ করোনা মহামারির ঘটনা ঘটেছে। পৃথিবী এখনো পুরোপুরি সেরে উঠেনি। চলছে টিকা ও স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের মাধ্যমে সুরক্ষার চেষ্টা। প্রাণঘাতী করোনা মহামারী একদিকে যেমন অভিশাপ অপরদিকে আশির্বাদ হয়ে পৃথিবীকে থমকে দিয়েছে। এ যেন পৃথিবীকে রিফ্রেশ/রিস্টার্ট করার মতো। লকডাউনের দীর্ঘ এই নতুন সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে হয়েছে পৃথিবীকে। কর্মক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। নতুন নতুন পদ্ধতিতে অফিস পরিচালনা করা, প্রযুক্তির ব্যবহার বহুগুনে বেড়ে যাওয়া, হোম অফিস পরিচালনা করা, শারিরিক দূরত্ব বজার রাখা, মাস্ক পরিধান করাসহ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করা ইত্যাদি নতুন পরিস্থিতির সামলে নিতে সবাইকে। প্রযুক্তি প্রেম আমার ছোট বেলা থেকেই। তাই প্রযুক্তি নির্ভর অফিসে মানিয়ে নিতে খুব সমস্যা হয়নি। সভা, অনুষ্ঠান, কর্মশালা, নথি ব্যবস্থাপনা, যোগাযোগ রক্ষা করা, ই-কমার্স এর মাধ্যমে কেনাবেটা সবকিছুই অনলাইনে করতে হচ্ছে। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করতে পেরেছি তা হলো একাডেমির ফেসবুক পেইজের ফলোয়ার বাড়ানো এবং ভেরিফাইড করা। একইসাথে ইউটিউবের সাবস্ক্রাইবার ওবেড়েছে উল্লেখ যোগ্য হারে। এখন শুধু এগিয়ে চলার পালা।
গত দুই বছরে বাংলাদেশে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য আয়োজনের মধ্যে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের আয়োজন। আমাদের দেশে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার ঠিক আগমূহুর্তে গত মার্চ ২০২০ এ শুরু হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই আয়োজন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির হয়ে মুজিববর্ষ জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির অনুষ্ঠান আয়োজনে গরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখার সুযোগ হয়েছে।
সময়ের সাথে কর্মক্ষেত্রে স্বীকৃতি বা পদোন্নতী পাবার প্রত্যাশা বাড়তে থাকে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। নির্দিষ্ট সময় পর পদোন্নতী বা স্বীকৃতি না পেলে কাজের আগ্রহ কমে যাওয়াটাও স্বাভাবিক। একইসাথে কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নিজের দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তাই চাকুরির পাশাপাশি পড়াশোনা করার আগ্রহ থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে মাষ্টার্সে ভর্তি হয়েছি। আইটি বিষয় নিয়ে পড়ার ইচ্ছা অনেক অগে থেকেই চিলো। আশাকরি সফলভাবে শেষ করতে পারবো।
সরকারের ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে একাডেমির শতাধিক ব্যবহারকারীকে ব্যবস্থাপনা, নেটওয়ার্কিং, সার্ভার ব্যবস্থাপনাসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি ও ইনোভেশন নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের উদ্যোগের অন্যতম বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ), জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল ও ইনোভেশন কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তথ্য অধিকার আইনে দায়িত্ব পালনসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল দাপ্তরিক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ হয়েছে।
কর্মক্ষেত্রে এসব কাজের অভিজ্ঞতার মাধ্যদিয়ে চার বছর পার করেছি। ভালো খারাপ মিলিয়েই মানুষের জীবন। অহংকার পতনের মূল, তাই নিরহংকারী, সৎ, নিষ্ঠা, সততা, শৃঙ্খলা বজায় রেখে দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে আরো ভালো কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।
সবার মঙ্গল কামনা করছি।