বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীনের শুরু থেকেই বিভিন্ন সংগঠনের সাথে কাজ করে আসছি। সাংস্কৃতিক ও সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত থেকে প্রতি দিনই নতুন নতুন শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি।
আমার সংগঠন চর্চার গুরুত্বপূর্ন একটি অধ্যায় হচ্ছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। ২০০৯ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পৃক্ত হয়ে বর্তমানে বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। সারাদেশে প্রায় দুই শত বন্ধুসভা রয়েছে। আঞ্চলিক পর্যায়ে এদের কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া এবং সংগঠনকে আরো গতিশীল করার লক্ষে তাদের মতামত ও পরামর্শ জানার জন্য সাংগঠনিক সফরের অয়োজন করা হয়। অল্পকিছু দিন আগেই ৫দিনের বড় একটি সাংগঠনিক সফলে উত্তরাঞ্চলের ৫টি জেলা ঘুরে এলাম। এই সফরের কিছু অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা এ পাঁচটি জেলায় সফরের উদ্যেশ্য ঢাকা মহানগরের বন্ধু আমিরুল ইসলাম কে নিয়ে ৯ মে ২০১৪ (শুক্রবার) রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিলাম। এর মধ্যে ৪টি জেলাতেই প্রথম বারের মত যাব। এর আগে আমার দায়িত্বে এতবড় সফরে যাওয়া হয়নি তারপর আবার গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরম। সবমিলিয়ে সফরটি ছিল চ্যলেঞ্জিং।
আঞ্চলিক পর্যায়ে সংগঠনকে নিয়মিত পরিসেবা দিয়ে অধিকতর গতিশিল করা সম্ভব বলে মনে হয়েছে। শহরের তুলনায় আঞ্চলিক পর্যায়ে সংগঠকেরা সময় বেশি পেলেও তাদের রয়েছে সুযোগ সুবিধার অভাব। জেলা শহরগুলোতে সাধারনত সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আগ্রহী কিছু ব্যক্তিরাই একাধিক সংগঠন পরিচালনা করে থাকে। এতে সুবিধা ও অসুবিধা দুটি দিকই লক্ষ করা যায়। নতুনভাবে লক্ষনীয় যে, সামাজিক ও সাংস্কৃকিত সংগঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের এনজিও বা বেসরকারি সংস্থাও ইদানিং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করা থাকে।
আর্থ-সামাজিক ও শিক্ষার উন্নতির সাথে সাংস্কৃতিক ও মননশীল চর্চার উন্নতি হয়েছে কি? সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। যার ফলে মানুষের মধ্যে নীতি নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সততার অভাব লক্ষকরা যায়। বানিজ্যিকিকরণ ও মননশিলতার চর্চাই এর জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি বলে আমার মনে হয়। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা পদ্ধতিকে ডিগ্রি নির্ভর না করে জ্ঞান ও আদর্শ নির্ভর করা।
এই সফরে বিশেষ অভিজ্ঞতার মধ্যে রয়েছে প্রতিটি জেলার সামাজিক, সাংগঠনিক ও সাংস্কৃকিত কর্মকান্ড সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। বন্ধুসভা ছাড়া অন্যান্য সংগঠনগুলো কিকি কাজ করে থাকে। অনেক অভিজ্ঞ সংগঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মির সাথে দেখা করে বিভিন্ন বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছি। মনে হয়েছে, রাজধানি ঢাকার বাইরেও অনেক মেধাবি ও ভালো ব্যক্তি আছে যারা আঞ্চলিক পর্যায়ে সংগঠন গুলোতে ভালো সংগঠক ও নেতার ভূমিকা পালন করেন।
সাংগঠনিক কাজের অভিজ্ঞতা ছাড়াও এ সফরে ভ্রমনের বেশ মজার অভিজ্ঞতা হয়েছে। একটি থেকে আরেকটি জেলায় যেতে বাসে সময়লেগেছে অন্তত ২থেকে ৩ঘন্টা। জেলা শহরগুলোতে দিনের শেষে নির্দিষ্ট সময় পর বাস পাওয়া যায়না। আমদের বাস পেতে কোন সমস্য না হলেও প্রথমদিন থেকেই সর্বশেষ বাসটির সবচেয়ে পেছনের আসনে বসেই গন্তব্যে যেতে হয়েছে। একইভাবে আবসিক হোটেলেও সবচেয়ে উপরের তলায় থাকতে হয়েছে। এতকিছুর পরও কোন ধরনের সমস্যা বা কষ্টা অনুভব করিনি। এটা সম্ভব শুধুমাত্র সংগঠনে ভালো কাজ করার চিন্তা থেকে। সংগঠনের কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের মানুষের জন্য ভালোকিছু করতে পারলেই তৃপ্তি পাই।
হাসান মাহমুদ
২৮.০৫.১৪